সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল কার্যক্রম দ্রুত চালু করুন
- আপলোড সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ০১:২৬:০১ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৮-০৪-২০২৫ ০১:২৬:০১ পূর্বাহ্ন

গত বুধবার (১৬ এপ্রিল) ‘সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজ : হাসপাতাল চালুর দাবিতে এবার শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ” শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বুধবার সকাল থেকে সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের সুনামগঞ্জ দিরাই রাস্তা এলাকায় মেডিকেল কলেজটির শিক্ষার্থীরা অবরোধ ও বিক্ষোভ করেন। একই সঙ্গে কলেজটির দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন কর্মসূচিও পালন করছেন।’
মোটকথা মেডিকেল কলেজ শুরু করে সেটার কার্যক্রমকে অসম্পূর্ণ রেখে, প্রকারান্তরে শিক্ষাকার্যক্রমকে পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন না করে শিক্ষার্থীদের সাথে কেবল প্রতারণা করা হচ্ছে না, বরং জীবননির্বাহের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করা হচ্ছে। এমন হলে জাতীয় পর্যায়ে জীবনমানের অবনতি ঘটবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা ‘সিএ নাই রেজিস্ট্রার নাই, ওয়ার্ড চালাবে কারা ভাই’; ‘ওয়ার্ড ক্লাসে অবহেলা, মানি না মানব না’; ‘হাসপাতাল ছাড়া মেডিকেল, চলবে না চলবে না’; ‘সদর হাসপাতালের উন্নয়ন চাই’ এবংবিধ বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন। জানা গেছে, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষা-কার্যক্রম চালু হলেও হাসপাতাল চালু না হওয়ার ক্লিনিক্যালি শিক্ষা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়াও ওয়ার্ড সুবিধা না পাওয়া, ট্রান্সপোর্ট, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব থাকায় দাপ্তরিক ও প্রশাসনিক কাজে প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত আছে। চিকিৎসা শিক্ষাকার্যক্রম চালুর ক্ষেত্রে এবংবিধ অভাব, ঘাটতি, অনিয়ম কিংবা সমস্যাসংকট কাটানোর জন্য চাই পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য। প্রশ্ন হলো আমাদের সরকারের হাতে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার জন্যে পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ্য আছে কী? এই প্রশ্নের জবাবে যে-কেউ নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারেন যে, সে আর্থিক সামর্থ্য সরকারের নেই। কারণ রাষ্ট্র পরিচালকেরা ইতোমধ্যে সিংহভাগ অর্থ বিদেশে পাচার করে দিয়ে যথারীতি নিজেরাও পগারপার হয়েছেন। এখন সরকারের হাতে মেডিকেল কলেজ চালানোর জন্যে পর্যাপ্ত টাকা নেই। প্রশাসন একটা কীছু করবেন বলে যতোই আশ^াস দিয়ে থাকুন না কেন, কার্যক্ষেত্রে সে আশ^াস বিশ^াস ভঙ্গের চোরাবালিতে তলিয়ে যাবার অপেক্ষায় আছে মাত্র, কৃষকের চোখের সামনে বন্যায় যেমন ফসল তলিয়ে যায়।
ভুলে যাবেন না, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগেই বেক্সিমকো গ্রুপের খেলাপি ঋণ ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ছিল এবং এস আলম দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কমপক্ষে দেড় লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন। গত ১ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রণীত একটি শ্বেতপত্রের খসড়া প্রতিবেদনে [শ্বেতপত্রটির শিরোনাম দেয়া হয়েছে ‘উন্নয়ন বয়ানের ব্যবচ্ছেদ’ (ডিসসেকশন অব এডেভেলপমেন্ট ন্যারেটিভ)] বলা হয়েছে যে, স্বৈরশাসক হাসিনার সাড়ে পনেরো বছরের লুটপাটতন্ত্রের মাধ্যমে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে মোট ২৩৪ বিলিয়ন ডলার লুণ্ঠিত হয়ে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠনের শিকার হয়েছে ব্যাংক খাত। তাছাড়া জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত, ভৌত অবকাঠামো খাত এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতও রেহাই পায়নি। অর্থাৎ দেশের অর্থনীতি এখন একটি রস নিংড়ে নেওয়া আখের ছোবড়ার নামান্তর। এমতাবস্থায় শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষির উন্নয়নের খাতে অর্থ ব্যয় করার সামর্থ্য আপাতত সরকারের নেই। নেই এজন্যে যে, ইতোমধ্যে লুটেরা স্বৈরশাসনের খপ্পরে পড়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হয়ে গিয়ে দেশে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম (বলা যায়, স্বজনপ্রীতির অর্থনীতি), ক্লেপ্টোক্রেসি (চৌর্যতন্ত্র) এবং গণধিকৃত অলিগার্কি (গোষ্ঠীতন্ত্র) চালু ছিল। কোনও দেশে এমন প্রকার চোরতন্ত্র চালু থাকলে দেশের বেসরকারি মানুষের কোনও উন্নয়ন হয় না, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষিতে যে অর্থ ব্যয় করার কথা সে অর্থ নিংড়ে নিয়ে সম্পদ আত্মসাৎকারীরা সমুদয় অর্থ বিদেশে পাচার করে কিংবা নিজেদের তহবিলে রেখে দিয়ে টাকার কুমির কিংবা ধনকুবের হয়ে উঠে। সুতরাং শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বাজেট না বাড়াতে পারলে মেডিকেল কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার কোনও সমাধান কোনও দিনই হবে না। লুটপাটতন্ত্রের অর্থনীতিকে আর্থনীতিক ও সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার অর্থনীতিতে রূপান্তর করতে হবে। এর কোনও বিকল্প নেই। সুতরাং ‘আমাদের শিক্ষাজীবনের ক্ষতির দায়ভার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে’ শিক্ষার্থীদের এবংবিধ স্লোগান চলতেই থাকবে অবস্থার কোনও মৌলিক পরিবর্তন না হলে। অর্থাৎ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে অবস্থাকে পাল্টে দেওয়ার রাজনীতি করতে হবে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ